Skip to main content

বহুনির্বাচনী ভালবাসা

১ম পর্বঃ

ছবিটা দেখতে দেখতে নিজেই সম্মোহিত হয়ে গেল প্রায়। কী যেন একটা আছে ছবিটাতে। যদিও এটা কাল্পনিক ব্যতীত অন্যকিছুই নয়, তবুও বাস্তবিকেই সম্মোহিত করে তুলে।

ঘুম লেগে আসছিল ছবিটা দেখতে দেখতে, এমন সময় অনির ফোন আসলো।

হ্যালো।

কিরে কী খবর তর? অনির মিষ্টি গলা ভেসে আসল ওপাশ থেকে।

হ, ভালা । তুই

এইতো আছি কোনোরকম।

কোনরকম ক্যা?

আজব! তুমি আমারে ভালবাসবা না, তাইলে কও ভালা থাকি কেমতে?

ঢং করবি না

তর কাছে তো সবই ঢং।

ওরে আমার ভালবাসারে, তুই জানস আমার বয় ফ্রেন্ড আছে। তারপরও তুই এরাম করস কেন?

তরে তো আমি কই নাই, তর বয় ফ্রেন্ডরে ছাড়তে হইব। আমার লগে ভালবাসার অভিনয় হইলেও করনা প্লীজ!

পারুম না, যা ভাগ

এরাম করস ক্যান?
একটু বাস না ভাল

আমি রাখলাম

ঐ ঐ, অনি প্লীজ রাখিস না, প্লীজ প্লীজ

ক, কী কবি

ভালবাসুম

তো বাস না, ধইরা রাখছে কেডায়

একতরফা ভালবাসা হয়না।

আইচ্ছা খাড়া, হেডফোনডা লাগাই লই

এই মেয়েটা তাকে কিছুতেই বুঝতে চাচ্ছে না। এই ভেবে মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল তার। সিগারেট একটা ধরিয়ে দুই টান দিয়ে পার্থর একটা গান গুনগুন করে ভাজতে লাগল,

আমি ভুলে যাই তুমি আমার নও
আমি ভুলে যাই তুমি
আমার নও

ঐ থাম ভ্যাওয়া ব্যাঙ।

আচ্ছা তুই আমারে এত হেয় করস ক্যান?

তর মত ভ্যাওয়া ব্যাঙরে হেয় না কইরা কি করুম? কোলে লইয়্যা গালে দুইডা চুমা দিমু!

হাসিব এই কথা শুনে চুপ করে গেল।

হ্যালো, হ্যালো

তবুও হাসিবের নিশ্চুপ থাকা

আমি কিন্তু রাইখ্যা দিলাম, বাই

এই না না, রাখিস না প্লীজ

শোন একটা কথা বলি, মেয়েরা যাকে পছন্দ করে তাকে পচাইতে বেশি ভালবাসে

তার মানে তুই আমাকে বেশি পছন্দ করস তাই না

হ, আর ভ্যাওয়া ব্যাঙ খুইজ্যা পাই নাই তো পছন্দ করনের লাইগ্যা

এরাম করস ক্যান, তরে সত্যিই আমি খুব পছন্দ করি।

থাক আর ভালবাসতে হইব না। আমি রাখলাম. বাই। তর কথা শুইন্যা মাথা ধইরা গেছে।

হাসিবকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা ট্যা ট্যা করে কেটে গেল।

আরও কয়েকবার ট্রাই করেও সংযোগ না পাওয়ায়
গান শুনতে শুনতে একসময় চোখে ঘুম লেগে আসল।

২য় পর্বঃ
গান শুনতে শুনতে কোন সময় ঘুমিয়ে পড়ল বলতে পারবে না এমন সময় আবার কার যেন ফোন আসল। তমার ফোন।

এই মেয়েটার সাথে তার প্রায় দুই বছরের রিলেশান, কিন্তু ইদানিং তাকে আর ভাল লাগছে না। কেমন যেন রোবটিক মাইন্ডের একটা মেয়ে।

হ্যালো।

এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলে?

কই কার লগে কথা কমু?কারও লগে না

তুমি না আমাকে একসপ্তাহর মধ্যে কল দিচ্ছ, এই তার কল দেয়ার নমুনা। আজকে চৌদ্দ দিন হয়ে গেছে, অথচ তোমার কোন খবর নাই।

বিজি ছিলাম, এখন পড়শোনার প্রচুর চাপ । পরীক্ষা সামনে বুঝতেই পারতাছ

আচ্ছা এত কথা বুঝি না, তুমি আমার সাথে দেখা করতে পারবা একটু

শুক্কুরবারেতো পারুম না, হলে থাকন লাগব মাষ্ট। অন্য যে কোনদিন পারলে পারতে পারি

কাল ফ্রী আছো?

একটু ভেবে হাসিবের জবাব, সকালে পারুম না। স্কুলে ক্লাস লইতে হইব।

সকালে না বিকালে

তাইলে হয়ত পারতে পারি

আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে কালকে বিকাল তিনটা বাজে বুদ্ধ মন্দিরে থাকবা

আইচ্ছা ঠিক আছে থাকুমনে। এখন পাখুটা আমার ঘুম যাও তুমি, আমার সকালে ক্লাস আছে।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোনটা রেখে দিল তমা।
হেডফোনটা কানে লাগিয়ে রেডিওটা অন করল। গান শুনতে শুনতে তার কান্না পাচ্ছিল প্রচন্ড।
সে এমন কী দোষ করেছিল, যে তার ভাগ্যে এমন একটা ভ্যাগাবন্ড টাইপ ছেলে পড়ছে?
হাসিবকে তো সে সত্যিই ভালবেসেছিল, তাহলে হাসিব তার সাথে এমন করছে কেন?

৩য় পর্বঃ

পরদিন যথাসময়ে দুজনেই নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হল। ট্যাক্সি নিয়ে পরিচিত একটা পার্কের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

তমা খুশি মনে হাত নেড়ে নেড়ে বিভিন্ন ঘটনা ব্যাখ্যা করতে লাগল।

হঠাত্‍ বলে উঠলো, আচ্ছা তোমার ঐ ছবিটা আমাকে দাওতো। ঐ যে ঈদের সময় যে ছবিটা তুলছিলে

ঐটাতো মোবাইলে সেভ করা নাই, আচ্ছা দাড়াও আমি নেট থেকে নামাই দিচ্ছি।

এমন আরও কত কত আহ্লাদ ঝড়ে পড়তে লাগল তমার কন্ঠ থেকে।

এসবের মাঝখানে হঠাতই তমা কথাটা পাড়ল

আচ্ছা হাসিব পাঁচ বছর পর তুমি আমাকে বিয়ে করতে পারবা কিনা বল

হাসিব কিছুটা ভ্যাবাছ্যাকা খেলেও সহজভাবে উত্তর দিল, আমার যতদূর মনে হয় তোমাকে ফ্যামিলি থেকে কখনই মেনে নেব না।

তাহলে আমাদের সম্পর্ক আজকেই শেষ, তুমি আর কখনও আমাকে ফোন দিবে না। আমিও তোমাকে দেব না।

হাসিবের আর কোন কথা না শুনেই হনহন করে চলে গেল তমা।

হঠাত্‍ করেই হাসিবের খুব কষ্ট লাগল, এতদিনের একটা রিলেশান। তার কান্না আসা উচিত্‍, কিন্তু জোর করেও কাঁদতে পারছে না।

শেষ পর্বঃ রাতে তমা হাসিবের একটা একটা ছবি দেখছে আর কান্নায় কেপে কেপে উঠছে কিছুক্ষণ পর পর। সে জানতো হাসিব ছেলেটা পাগলাটে স্বভাবের। মাথায় কিছুটা ছিট আছে। সে না থাকলে এতদিলে কি যে অবস্থা হত কে জানে। শেষ পর্যন্ত অনেক কষ্টে ডিসিশান নিল কালকেই আবার হাসিবের কাছে ফিরে যাবে। ওর শ্রেষ্ঠ ভালবাসাটাই দেবে ওকে। এরপর দেখা যাবে কিভাবে তাকে রিফিউজ করে।
এভাবেই কোন সময় ঘুমিয়ে পড়ল বলতে পারবে না।

এইদিকে হাসিব বিষন্ন মন নিয়ে প্রতি রাতের মত আজকেও হাটতে বের হয়েছে। কানে হেডফোন লাগিয়ে ঐগানটা শুনতে লাগল, তুমি আমার নও, তুমি আমার নও

আসলেইতো আমি তমার নই। হঠাতই হাসিবের মাথায় এইটা খেলে যায়। তার সাথে অনির ক্ষেত্রে যেমন গানটার কথা মিলে যায়, তেমনি তমার সাথে তার ক্ষেত্রেও মিলে যায়।

মনেমনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল, কালকেই তমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে। আশা করি তমা তাকে ফিরিয়ে দেবে না। কারণ তাদের মাঝে ভালবাসাটা একসময় সত্যিকার ভাবেই ছিল।

শেষকথাঃ
কানে হেডফোন থাকায় এবং চিন্তায় মগ্ন থাকায় পিছনের ট্রাকটার দিকে একবার খেয়াল করেনি হাসিব। এরপর দিন হাসিবের মা তার ছেলের লাশ দেখে যতটা না অবাক হল, তার চেয়ে বেশি অবাক হল একটা অপরিচিত মেয়ে হাসিবের নিথর শরীরটাকে জড়িয়ে কাঁদতে দেখে।

Comments

গুরুপাপ

স্বার্থপরতা

মানুষ বড়ই আজিব প্রাণী। আসলে মানুষ যে কী জানে না, তাই জানে না। আবার কী জানে তাও জানে না। কিন্তু ভাবতে গেলে দেখা যাবে, সে অনেক কিছুই জানে। একই সাথে কোন কিছুই জানে না। যেমন এই কথাগুলো কেন লিখছি আমি নিজেও তা জানি না। আসলে আমার মনটা কিছুদিন যাবত্‍ খুব খারাপ যাচ্ছে। এই কয়েকদিন আমি আমার সম্পর্কে যা যা চিন্তা করেছি, তা যদি কোন ভাবে লিপিবদ্ধ করতে পারতাম, তাহলে হয়তো আমার স্বভাব বা প্রকৃতি সম্পর্কে একটা সঠিক ধারণা আমি নিজে পেতাম। আজকাল নিজেকেও বড় অচেনা লাগে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি আমার চিন্তা ভাবনাগুলো লিপিবদ্ধ করতে পারি না। কারণ আমার মন যেভাবে চিন্তা করে, হাত সেভাবে চলে না। যদি মনের ছায়া হাতের মাধ্যমে ফেলা যেত, তাহলে মানুষ আজ এত দূরে এগিয়ে যেতে পারত, যা কেবল সায়েন্স ফিকসনেই সম্ভব। স্বার্থপরতা নিয়ে চিন্তা করছিলাম কিছুদিন যাবত্‍। এই বিষয় নিয়ে লেখতে শুরু করার কারণ হতে পারে, নিজেকে নিঃস্বার্থবান প্রমাণ করা। এবং এটাই সবচেয়ে বড় স্বার্থপরতা নয়? কিছু মনে করবেন না, আমি লেখার মাঝে আমার মনের ছায়া ফেলার চেষ্টা করছি। যদিও জানি বৃথা চেষ্টা। এটা কখনও পুরোপুরি সফল হবেনা। মানুষ কখনও স্বার্থপর হওয়া

একটি মেয়ের লেখা কিছু কবিতা।

১.পাখিরা আকাশে উড়ে নীচে পড়ে ছায়া প্রেম করে দূরে গেলে ভুলে যায় মায়া ২. ভাইয়া তুমি চাঁদের মত সূর্যের মত আলো কেমন করে লেখব চিঠি আমি যে খুব কালো ৩. চাঁদ সুন্দর ফুল সুন্দর আরও সুন্দর তুমি এই দুনিয়ায় দুটি প্রান তুমি আর আমি ৪.সামনে তোমার চাঁদের পাহাড় পিছনেতে আমি এবার বলো, কোনটা নিবে কোনটা বেশি দামী ৫. আম গাছে আম কদু গাছে কদু মেয়েদের বুকেই নাকী ছেলেদের মধু ৬. কোথায় রাখি এই উপহার সাত আকাশের তারা আর কিছু নেই আমার তো হৃদয়খানি ছাড়া ৭. কুটুম পাখি কুটুম পাখি তুমি কুটুম কার আমি বলি আমার কুটুম সে বলে তার আমার কাছে এলে তোমায় দেব খুশির চুম মজার মজার স্বপ্ন দেব দু চোখ ভরা ঘুম

হাজার বর্ষ আগে - জীবনানন্দ দাশ

সেই মেয়েটি এর থেকে নিকটতর হ’লো না : কেবল সে দূরের থেকে আমার দিকে একবার তাকালো আমি বুঝলাম চকিত হয়ে মাথা নোয়ালো সে কিন্তু তবুও তার তাকাবার প্রয়োজন – সপ্রতিভ হয়ে সাত-দিন আট-দিন ন-দিন দশ-দিন সপ্রতিভ হয়ে — সপ্রতিভ হয়ে সমস্ত চোখ দিয়ে আমাকে নির্দিষ্ট করে অপেক্ষা করে — অপেক্ষা ক’রে সেই মেয়েটি এর চেয়ে নিকটতর হ’লো না কারণ, আমাদের জীবন পাখিদের মতো নয় যদি হ’ত সেই মাঘের নীল আকাশে (আমি তাকে নিয়ে) একবার ধবলাটের সমুদ্রের দিকে চলতাম গাঙশালিখের মতো আমরা দু’টিতে আমি কোন এক পাখির জীবনের জন্য অপেক্ষা করছি তুমি কোন এক পাখির জীবনের জন্য অপেক্ষা করছো হয়তো হাজার হাজার বছর পরে মাঘের নীল আকাশে সমুদ্রের দিকে যখন উড়ে যাবো আমাদের মনে হবে হাজার হাজার বছর আগে আমরা এমন উড়ে যেতে চেয়েছিলাম।

হুমায়ুন আজাদের প্রবচন গুচ্ছ

মহামতি সলোমনের নাকি তিন শো পত্নী, আর সাত হাজার উপপত্নী ছিলো। আমার মাত্র একটি পত্নী। তবু সলোমনের চরিত্র সম্পর্কে কারো কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু আমার চরিত্র নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। বাঙলার প্রধান ও গৌণ লেখকদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে প্রধানেরা পশ্চিম থেকে প্রচুর ঋণ করেন, আর গৌণরা আবর্তিত হন নিজেদের মৌলিক মূর্খতার মধ্যে। বাঙালি মুসলমানের এক গোত্র মনে করে নজরুলই পৃথিবীর একমাত্র ও শেষ কবি। আদের আর কোনো কবির দরকার নেই। বাঙালি যখন সত্য কথা বলে তখন বুঝতে হবে পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে। আধুনিক প্রচার মাধ্যমগুলো অসংখ্য শুয়োরবৎসকে মহামানবরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে। অধিকাংশ রূপসীর হাসির শোভা মাংসপেশির কৃতিত্ব, হৃদয়ের কৃতিত্ব নয়। পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও। পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও। শৃঙ্খলপ্রিয় সিংহের থেকে স্বাধীন গাধা উত্তম। বাঙলায় তরুণ বাবরালিরা খেলারাম, বুড়ো বাবরালিরাভণ্ডরাম। প্রাক্তন বিদ্রোহীদের কবরে যখন স্মৃতিসৌধ মাথা তোলে, নতুন বিদ্রোহীরা তখন কারাগারে ঢোকে, ফাসিঁকাঠে ঝোলে। একনায়কেরা এখন গণতন্ত্রের স্তব করে, পুজিঁপতিরা ব্যস্ত থাকে সমাজ

ছেঁড়া নোঙ্গর -তুচ্ছ

একটা আঁধার চাই আঁধার নিকষ গাঢ় অন্ধকার থকথকে পিচ্ছিল আর নিঃস্বার্থবান আঁধার এই পটভূমিতে কালো অন্ধ পদরেখা মোর হেঁটে যাই গৃহ পথ পানে খুজে যাই সেই পুরোনো আঁধার আর না পাওয়া প্রিয়তমাকে দেয় সে জোর হাতছানি ডাকে মোরে তার কাছে ভেবে হই দিশেহারা মরীচিকা যদি হয় পাছে আবারও অতলে যাই তলায়ে যাই ভুলে তার পথ দেখেনু হৃদয় ভেঙ্গে মোর আজ হয়েছে তীক্ষ্ন ক্ষত ফিরিব আবার তাই বুঝি আমি ডুবেছি ভুলের সাগরে মন নৌকৌ আজি মেলিছে পাল ঘুণ ধরেছে ছেঁড়া নোঙ্গরে